কবিতায়
নাটিকা-যৌতুক প্রতিরোধ আন্দোলন।
রচনা-
মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বাবু
প্রথম
দৃশ্য - অঙ্ক-১
ঘটক:
ওরে ও কুলসুমের মা ,মাইয়া তো বড় হইছে বিয়া কি দিবা না ?
জরিনা
: কি বলেন পড়ে সবে এইটে বিয়ে আমি দেব না
মা
হয়ে মেয়ের সর্বনাশ আমি করবো না। যাও ,যাও অন্য কোথাও।
ঘটক
: বুজছি কিচ্ছু হবে না এখানে , মগাটাকেই ধরতে
হবে।
প্রথম
দৃশ্য - অঙ্ক-২
ঘটক
: মাইয়া বড় হইছে ,সেয়ানা হইছে ,লোকে কত কিছু বলে
বলি
,ওহে গফুর মেয়ের বিয়ে দিবে কবে ?
গফুর : কি জানি বাপু ,কি যে করি ,
মেয়ে
বলে লেখা পড়া করবে
মাষ্টার
নয় ডাক্তার হবে.
ঘটক
: হি: হি: কি বললে গফুর ,তুমি এক ফতুর
মেয়ে
হবে মাস্টার নয়তো ডাক্তার ,হাসলে হাসলে।
গফুর
: আমি কি যে করি হাতে নাই পয়সা কড়ি ,
ঘটক
: দেখো ভায়া বলি তোমায় ,এমন ছেলে নাই দুনিয়ায়
তেমন
কিছু লাগবে না। দেখো ভেবে মেয়ে তোমার সেয়ানা
দেখতে
নয় তেমন কিছু ,একবার যদি সুযোগ যায়
বলে
দিলাম করবে পরে হায় ,হায়।
গফুর
: ছেলে কে জানতে পারি ,আছে কেমন পয়সা কড়ি
ঘটক:
হে :হে : পাশের গ্রামের নজর মিয়া , প্রায়শই
থাকে বিদেশ গিয়া
আমদানি
রফতানির কাজ কারবার ,হৃষ্ট পুষ্ট জোয়ান ,দেখতে চমত্কার।
গফুর:
কি যে করি ,ঘটক মুন্সী ভাই ,দেখি বাড়ি যাই ,বাড়ি ওয়ালী মাইয়ার মে কি বলে।
ঘটক
: যাও যাও গফুর করবো নাকো সবুর ,হাতে আছে ওনেক মাইয়া ,সাথে টাকা কড়ি গয়না।
গফুর
: ঠিক আছে দেখি ভাবিয়া।
ঘটক
: আরে আরে কই যাও ,চা নাস্তার টাকা দাও
গফুর
: আরে মুন্সী অভ্যাস গেলো না , এই আছেই পকেটে টাকা বিষ .
ঘটক:
আপাতত এটাই আমার বউনি ,একেবারে কিসমিস।
দ্বিতীয়
দৃশ্য-অঙ্ক-১
গফুর:
কি গেলা কুলসুমের মা হইয়া গেল ঝামেলা
জরিনা:
কে গো কুলসুমের বাপ ,কিসের ঝামেলা ?
গফুর:ঘটক
আসছিলো ,কুলসুমের বিয়া নিয়া
জরিনা:
না না আমি এ বয়সে মাইয়ারে দিমু না বিয়া ,আমার বাপে করছে ভুল
অল্প
বয়সে দিসিলো বিয়া ,ক্লান্ত আমি ,বছর বছর বাচ্চা
জন্ম দিয়া ,
বাঁচলো শুধু একটা,কুলসুম আমার একমাত্র বেছে থাকা আদরের
মাইয়া ,
তারে
আমি দিমু না বিয়া।
মাইয়াগো
পড়া লেখা দরকার
মাইয়া আমার হইবো ডাক্তার নয়তো মাস্টার।
দ্বিতীয়
দৃশ্য-অঙ্ক-২
ঘটক:
ওহহ ওহঃ বাড়ি আছ্ নাকি গফুর মিয়া ,
বাজারে
শুনলাম কথা হচ্ছে মাইয়া নিয়া –
জরিনা
ও গফুর: কি , কথা, কি কথা
ঘটক:
কুলসুমের দিকে নজর দিছে মাতবরের বেটা।
মাতবর নাকি
তোমার কাছে পাবে অনেক টাকা।
ভিটে বাড়ি বন্ধক আছে ,তাতো আমারে বলো নাই মিয়া।
মাতবরের
বেটা তাড়ি খায় পথে ঘটে
উঁকি
মারে পুকুর ঘটে ,মেয়ে দেখলেই করে ইয়ার্কি ।
জরিনা
ও গফুর: কি করি ঘটক বুদ্ধি
দিতে পারকি?
ঘটক
: একটা বুদ্ধি দিতে পারি ,কুলসুমের বিয়ে দাও
তাড়া তাড়ি।
গফুর
ও জরিনা: রাজি আমরা রাজি।
ঘটক
: ঠিক আছে ,ঠিক আছে ,আমি আনি বর তুমি আনো কাজী।
তৃতীয়
দৃশ্য-
(বিয়ের
কয়েক মাস পর )
নজর
মিয়া: ওই তোর্ তো বড় বেইমান ,
বিয়ার
আসর থেইকা উঠতে চাইলাম ,ধরলো আমার হাত ,
বলল
বাবা রাজু মোটর সাইকেল দিমু তোমারে ,
এই
বয়সে কইরোনা বরবাদ ,
মান
ইজ্জত যে টুকু আছে ,রাখতে আমায় দাও ,
বাড়ি
বিক্রি করে আমি দেব,যা তুমি চাও।
কুলসুম:
ঘটক নাকি বলছে বাবারে ,
বিশাল
কারবার তোমার দেশে-বিদেশে ,
এখন
দেখি ঘুমাও শুধু নাক ডেকে।
পড়তে
আমায় দিলো না ,স্বপ্ন পূরণ হলো না,
বাপ
আমার গরিব আছে
মোটর
সাইকেল দিবে কিভাবে । বাপ আমার কষ্টে আছে ,
ভিটা
মাটি সব গেছে ,গরীব আমরা, যা হবার তা হয়েছে
কাজ করো ,ডাল ভাতে থাকবো সুখে।
নজর: তুই আমরে জ্ঞান দেস ,এতো বড় সাহস ,
আছে
তোর্ আছে, খবর ,আইজ তোরে দেবো কবর।
আইজ
যাবি বাপের বাড়ি ,
মোটর
সাইকেল নয়তো টাকা নিয়া আসবি।
চতুর্থ
দৃশ্য- অঙ্ক ১
কুলসুম
: মা মা
জরিনা:
ওরে আমার মা কুলসুম ,এ কি তোর্ একই অবস্থা মা ,জামাই কই
কুলসুম
: মা বাবা কই ,
জরিনা
: ঘরে , অসুখে এই বুঝি দুনিয়া ছাড়ে।
(ঘরে
ভিতর থেকে গফুরের আওয়াজ )
গফুর
: মা আমরে ক্ষমা করিস মা ,আমি ভুল করেছি তোকে বিয়ে দিয়ে ,
খবর পেয়েছি প্রতিদিন আছিস অত্যচারে।
জরিনা:
কি ওই হারামি আমার মেয়েরে মারে ,কেনো বলোনি আমায় আগে।
গফুর:
কষ্ট পাবে বলে বলিনি ,ক্ষমা করো মোরে।
চতুর্থ
দৃশ্য- অঙ্ক ২
নজর
: কুলসুম কুলসুম কোথায় গেলে ?
জরিনা:
কি গো বাবাজি শুনলাম
নজর
: আম্মা মেয়ে আপনার করে দুষ্টামি ,
হাসতে
বললাম ,বাবা বলেছিলো দিবে মোটর সাইকেল
এখন
দেখি কয়দিন পর পর পাঠায় নারিকেল।
না
দিলে হুন্ডা লেলিয়ে দিবো গুন্ডা। ব্যাবসা আমার মন্দ
তাই
সকাল বিকাল স্বামী স্ত্রীর সামান্য দন্ধ। বাদ দেন ,ওরে ডাক দেন।
জরিনা:
কইরে মা ,জামাই আসছে নিতে রাগ করে না।
কুলসুম:
না আমি যাবো না ,না খেয়ে পড়ে থাকবো ,
তোমাদের
দুয়ারে, আমি যাবো না।
নজর:
ওরে লক্ষী সোনা রাগ করে না ,চলো চলো।
কুলসুম
: মা যখন তখন ও আমারে ,
সইতে
নাহি পারি . ছিঁড়ে যায় নাড়ি
ভুড়ি.
জরিনা:শুরুতে
কষ্ট হয় ,সইতে হয় ,
আমরা
জাতে নরী.যা মা যা
কুলসুম:
আমি আমি এবার আসি।
পঞ্চম
দৃশ্য- অঙ্ক-১
নজর:
আসলি খালি হাতে ,তোরে আমার নাইরে
তুই
থাকলে করতে পারবো না আরেকটা বিয়া
তোরে
জালাবো আমি কেরোসিন দিয়া .
কুলসুম:
আমারে নিয়া আসলা আদর যতন করি
এখন
তুমি কি শোনাও ,পাগল হইলা নাকি।
পঞ্চম
দৃশ্য- অঙ্ক-২
কুলসুম:কি
করো করো ,ক্ষমা কর ছেড়ে দাও আমারে।
বিয়া
করো ,যা খুশি করো মেরো না আমারে।
মা
মা ,বাবা ,বাবা বাঁচাও না মোরে।
ছষ্ঠ
দৃশ্য -
ভিখারী:
কই গেলা কুলসুমের মা ,কুলসুমের বাপ ,
শুনছ
নাকি তোমারা কাছে আসো ,খবর বড়ই জরুরী।
জরিনা
ও গফুর : কি হইছে ,কি হইছে বলগো তাড়া তাড়ি.
ভিখারী:
কুলসুম আছে হাসপাতালে , জামাই তোমাগো আগুনে পোড়াইছে তারে .
জরিনা
ও গফুর : ওরে আল্লাহ একি হইলো ,একি হইলো বাচাঁও আমার মেয়েরে.
গ্রামের
ছেলে: গফুর চাচা গফুর চাচা ,কুলসুম বেচে নাই
চলে গেছে পরপারে।
জরিনা
ও গফুর : সব দোষ আমার ,না বুঝে ঘটকের কথায় দিসিলাম বিয়া
মেয়ে
আমার যৌতুকে বলি হইলো আগুনে পুড়িয়া।
গ্রামের
ছেলে: এই ভাবে আর কতকাল অকালে দিবে প্রাণ সকিনা কুলসুম
করতে
হবে প্রতিবাদ , দেশ,সমাজ , রুখতে হবে জুলুম
শোনেন
ভাই বন্ধু গণ হতে হবে সচেতন
আসুন
সবাই মিলে সফল করি ,"যৌতুক প্রতিরোধ আন্দোলন।"
২৪-১-২০১৫
ইং।
No comments:
Post a Comment